
অজিত দাস মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
শিল্পায়নের নামে কৃষি জমির রকম পরিবর্তন করে মৌলভীবাজারের হাইল হাওরে ভারি যন্ত্র দিয়ে খনন কাজ চালাচ্ছে প্রাণ আর আর এফ এল’র প্রতিষ্ঠান হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড।
পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে প্রায় ১ হাজার একর জমি খননে শতাধিক এক্সেকেভেটর মাটি খননের যন্ত্র দিয়ে কাজ শুরু করলে স্থানীয় কৃষক- জনতা বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
এঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় কৃষক,জেলে সম্প্রদায় ও পরিবেশ বাদী সংগঠন।
উল্যেখ থাকে যে কৃষিজমি সংরক্ষণ ও যথাযথ ব্যবহার আইন( ২০২২-এর ৪ ধারা) মোতাবেক কোন জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা দন্ডণীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এছাড়া যেকোনো শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তর ও কৃষি অফিস থেকে অনুমোদন নেয়ার বিধি থাকলেও এসবের কিছুই নেয়নি হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড।
অনুসন্ধানে জানাযায় গত পতিত সরকারের কতিপয় দোসরদের মদদে হাওরাঞ্চল- বনাঞ্চলে যাচ্ছে তা-ই ভাবে অবৈধ উপায়ে দখল করে পরিবেশ ধ্বংস করবার মহোৎসব চলে আসছিল। অতীতে দখল জালিয়াতির ঘটনার সুত্রপাত হলেও সাধারণ মানুষ ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। ৫ আগষ্ট পটভূমি পরিবর্তন হলে ক্ষুব্ধ কৃষক -জনতা জমি জালিয়াত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে।গত ১৫ মার্চ রাতে সদর উপজেলার হাওরপার এলাকার ইমাম বাজারে সমাবেশ কালে পুলিশ প্রাণ আর এফ এল’র মালিকানা হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আসামী ধরতে গেলে পুলিশ ও এলাকা বাসীর মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
এসময় আফতাব ও আব্দুল্লাহ নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। এঘটনায় সাংবাদিকসহ ১৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে পুলিশ।
এব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী সাংবাদিকদের বলেন ভুমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে হাওরাঞ্চলে বেআইনী আগ্রাসন চালাচ্ছে প্রাণ আর এফ এল।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ইসরাইল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন,আমি ঘটনার বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
হাওর রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক খছরু চৌধুরী বলেন, হাওর খনন করে ফিশারি করা সম্পূর্ণ বেআইনি জেনেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের স্টাইলে হাইল হাওর, কাওয়া দিঘিসহ হাওর বনাঞ্চল ধ্বংসের পায়তারার পরিকল্পনা বন্ধ না হলে আমরা সরকারের উপর মহলে অভিযোগসহ রাজপথে আন্দোলন করব।
মামলার আসামী সাংবাদিক রুমান আহমদ বলেন ইমাম বাজারের সমাবেশ সময়ে আমি জেলা সদরে অবস্থান করছিলাম। এলাকায় বাড়ি থাকায় আমাকেও আসামি করা হয়েছে। মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি ও নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে জেলা সদরে আমার সিসিটিভির ফুটেজ জেলা পুলিশ সুপার ও মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।
জেলা প্রশাসন ও তথ্য অফিস সুত্রে জানাযায় মৌলভীবাজার সদর এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা নিয়ে হাইল হাওর। এ হাওরের আয়তন ১০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ২ হাজার একর সরকারি খাস জমি।
হাওরে ১৪০০ হেক্টর বিল এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য ছোট বড় ১৩টি নদী রয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই হাওরকে উপলক্ষ করে আড়াই লক্ষাধিক কৃষক, জেলে শ্রমিক হাওরের ছোট, মাঝারি গোপাট, ছড়ায় কৃষি উৎপাদন গরু ছাগল ও মাছ ধরে বিভিন্ন ভাবে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
গত (১০ এপ্রিল) হাইল হাওরে হবিগঞ্জ এগ্রো লিঃ ( প্রাণ কোং) কর্তৃক হাওর পরিবেশ ধ্বংসকারী প্রকল্প নির্মাণের প্রতিবাদে ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শতাধিক কৃষক জনতার উপস্থিতিতে মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল করেছে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে পরে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে হাইল হাওর রক্ষা আন্দোলন মৌলভীবাজার।