Dhaka 12:54 am, Sunday, 20 April 2025
সর্বশেষঃ
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী রশিটান খেলা অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহের তারাকান্দায় দুই শিক্ষকের জমকালো আয়োজনে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত কবি আসাদ উল্লাহর কবিতা – জানে না বাউল উদাসী সাংবাদিক আরিফুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হুমকির প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন কালিহাতীতে চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত কালিহাতীতে রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে শাহীন সিদ্দিকী গংদের নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন সরকারি গাড়িতে পার্কে ঘুরতে যাওয়ার মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে ইউএনও’কে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা কক্সবাজার – মহেশখালী নৌ রুটে প্রথমবার চালু টেকনাফ সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ কেয়ারী সিন্দাবাদের অফিসে আগুন শিবালয়ে জাফরগঞ্জ পোষ্ট অফিস ভবন পুনঃস্থাপন চায় এলাকাবাসী

রাজশাহীতে দরিদ্রদের মধ্যে করোনা বাড়ছে

  • Reporter Name
  • Update Time : 06:29:17 pm, Monday, 21 June 2021
  • 178 Time View
সেলিনার মতো দরিদ্র অনেক করোনা রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওষুধপত্রসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কিনে দিনের পর দিন চিকিৎসা চালানোর সামর্থ্য এসব পরিবারের নেই। অথচ করোনার শুরুর দিকে গ্রামের মানুষকে বলতে শোনা গেছে, এটা ধনীদের অসুখ। যাঁরা এসিতে থাকেন, তাঁদের অসুখ। তাঁরা মাস্ক পরে থাকুন। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারটি তাই আমলে নেননি তেমন। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা ধনী–গরিব মানে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে যা কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রোগী গ্রাম থেকে আসা দরিদ্র মানুষ।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, জুন মাসের শুরু থেকে তাঁরা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ গ্রামের সাধারণ রোগী আইসিইউতে পাচ্ছেন; যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হবেন, এমনটা ভাবতেও পারেননি। তিনি বলেন, আইসিইউ ফ্রি। কিন্তু করোনায় শরীর প্রচণ্ড দুর্বল করে দিয়ে যায়, সে সময় অতিরিক্ত পুষ্টির দরকার। অক্সিজেন থাকার কারণে মুখে খেতে পারে না। তখন দামি স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হয়। কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়। কিছু পরীক্ষাও হাসপাতালে হয়। তবে দামি পরীক্ষাগুলো বাইরে করাতে হয়। এই খরচ জোগাড় করতেই দরিদ্র রোগীদের স্বজনেরা হিমশিম খাচ্ছেন।
আবু হেনা মোস্তফা কামাল আরও বলেন, এবারের ডেলটা ভেরিয়েন্টের কারণে যাঁদের আইসিইউ লাগছে, তাঁদের আরও ৩–৪ সপ্তাহ পোস্ট কোভিড চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকা, প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন, পর্যাপ্ত পুষ্টি ও সম্পূর্ণ বিশ্রামের ব্যাপারে শৈথিল্য—এগুলো মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

হাসপাতালের খাতায় রোকেয়া খাতুনের ডাকনাম লেখা আছে বেবী। বয়স ৫৫ বছর। তাঁর বাড়ি নাটোরের চকরামপুরে। তাঁর স্বামী আবদুল মতিন মাত্র ৮ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি করেন। এ চাকরি সরকারি নয়। তাঁরা ১১ দিন ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন। তাঁর জামাতা ফজলুল ইসলামসহ তিনজন লোক সঙ্গে রয়েছেন। তাঁদেরও খরচ আছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। জামাতার ভাষায়, এই টাকা এর-ওর কাছ থেকে ধার করে এনেছেন। এই চিকিৎসায় তাঁরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।

হাসপাতালের খাতায় আনোয়ার সাদাতের নাম লেখা রয়েছে মিরন। তাঁর বয়স ৪০ বছর। বাড়ি রাজশাহী নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকায়। তাঁর বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর চাকরি করতেন। মিরন উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বেকার থাকার কারণে এখনো বিয়ে করেননি। সংসারে আয়ের কোনো মানুষ নেই। ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর মা শাহিন আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি আর উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। তাঁর করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। ফলাফল অবশ্য নেগেটিভ এসেছে। তারপরও তিনি বাসায় পড়ে আছেন। একমাত্র ছোট বোন ফারহানা হাসপাতালে ছিল। সে–ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন হাসপাতালে মিরনের কাছে তাঁর ফুফু নাজমা বেগম আছেন। তিনিই এ কাহিনি শোনালেন। তাঁর ভাষায়, তিনি ছাড়া তাঁর ভাতিজাকে দেখার আর কেউ নেই। একটা ইঞ্জেকশনের দামে সাড়ে তিন হাজার টাকা। দিনে তিনবার দিতে হচ্ছে। আজ একটা স্যালাইন লিখে দিল, সেটা আনা হলো। তার দাম ২ হাজার ৩৫০ টাকা। তিনি বলেন, তাঁদের মতো পরিবারের মানুষের এই চিকিৎসার ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়।

রোববার সকাল পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৯৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি ৩৭৭ জন। করোনা শনাক্তের হার ৪৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

২০ জুন পর্যন্ত রাজশাহী নগরে করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। শনাক্ত হিসাবে মৃত্যু ছিল শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর উপজেলাগুলোতে শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

জেলা করোনা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল বলেন, করোনা একটি অদৃশ্য ভাইরাস। এটা শুধু শহরেই নয়, গ্রামের দিকেও ছড়িয়ে পড়ছে। এটায় শ্রেণি, পেশা বা ধনী–গরিবনির্বিশেষে আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বিনা প্রয়োজনে বাইরে না বের হওয়ার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

sadhin bangladesh

আরও দেখুন

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী রশিটান খেলা অনুষ্ঠিত

রাজশাহীতে দরিদ্রদের মধ্যে করোনা বাড়ছে

Update Time : 06:29:17 pm, Monday, 21 June 2021
সেলিনার মতো দরিদ্র অনেক করোনা রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওষুধপত্রসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কিনে দিনের পর দিন চিকিৎসা চালানোর সামর্থ্য এসব পরিবারের নেই। অথচ করোনার শুরুর দিকে গ্রামের মানুষকে বলতে শোনা গেছে, এটা ধনীদের অসুখ। যাঁরা এসিতে থাকেন, তাঁদের অসুখ। তাঁরা মাস্ক পরে থাকুন। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারটি তাই আমলে নেননি তেমন। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা ধনী–গরিব মানে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে যা কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রোগী গ্রাম থেকে আসা দরিদ্র মানুষ।

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, জুন মাসের শুরু থেকে তাঁরা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ গ্রামের সাধারণ রোগী আইসিইউতে পাচ্ছেন; যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হবেন, এমনটা ভাবতেও পারেননি। তিনি বলেন, আইসিইউ ফ্রি। কিন্তু করোনায় শরীর প্রচণ্ড দুর্বল করে দিয়ে যায়, সে সময় অতিরিক্ত পুষ্টির দরকার। অক্সিজেন থাকার কারণে মুখে খেতে পারে না। তখন দামি স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হয়। কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়। কিছু পরীক্ষাও হাসপাতালে হয়। তবে দামি পরীক্ষাগুলো বাইরে করাতে হয়। এই খরচ জোগাড় করতেই দরিদ্র রোগীদের স্বজনেরা হিমশিম খাচ্ছেন।
আবু হেনা মোস্তফা কামাল আরও বলেন, এবারের ডেলটা ভেরিয়েন্টের কারণে যাঁদের আইসিইউ লাগছে, তাঁদের আরও ৩–৪ সপ্তাহ পোস্ট কোভিড চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকা, প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন, পর্যাপ্ত পুষ্টি ও সম্পূর্ণ বিশ্রামের ব্যাপারে শৈথিল্য—এগুলো মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

হাসপাতালের খাতায় রোকেয়া খাতুনের ডাকনাম লেখা আছে বেবী। বয়স ৫৫ বছর। তাঁর বাড়ি নাটোরের চকরামপুরে। তাঁর স্বামী আবদুল মতিন মাত্র ৮ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি করেন। এ চাকরি সরকারি নয়। তাঁরা ১১ দিন ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন। তাঁর জামাতা ফজলুল ইসলামসহ তিনজন লোক সঙ্গে রয়েছেন। তাঁদেরও খরচ আছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। জামাতার ভাষায়, এই টাকা এর-ওর কাছ থেকে ধার করে এনেছেন। এই চিকিৎসায় তাঁরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।

হাসপাতালের খাতায় আনোয়ার সাদাতের নাম লেখা রয়েছে মিরন। তাঁর বয়স ৪০ বছর। বাড়ি রাজশাহী নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকায়। তাঁর বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর চাকরি করতেন। মিরন উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বেকার থাকার কারণে এখনো বিয়ে করেননি। সংসারে আয়ের কোনো মানুষ নেই। ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর মা শাহিন আক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি আর উঠে দাঁড়াতে পারছেন না। তাঁর করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। ফলাফল অবশ্য নেগেটিভ এসেছে। তারপরও তিনি বাসায় পড়ে আছেন। একমাত্র ছোট বোন ফারহানা হাসপাতালে ছিল। সে–ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন হাসপাতালে মিরনের কাছে তাঁর ফুফু নাজমা বেগম আছেন। তিনিই এ কাহিনি শোনালেন। তাঁর ভাষায়, তিনি ছাড়া তাঁর ভাতিজাকে দেখার আর কেউ নেই। একটা ইঞ্জেকশনের দামে সাড়ে তিন হাজার টাকা। দিনে তিনবার দিতে হচ্ছে। আজ একটা স্যালাইন লিখে দিল, সেটা আনা হলো। তার দাম ২ হাজার ৩৫০ টাকা। তিনি বলেন, তাঁদের মতো পরিবারের মানুষের এই চিকিৎসার ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়।

রোববার সকাল পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৯৫ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি ৩৭৭ জন। করোনা শনাক্তের হার ৪৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

২০ জুন পর্যন্ত রাজশাহী নগরে করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। শনাক্ত হিসাবে মৃত্যু ছিল শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর উপজেলাগুলোতে শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

জেলা করোনা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল বলেন, করোনা একটি অদৃশ্য ভাইরাস। এটা শুধু শহরেই নয়, গ্রামের দিকেও ছড়িয়ে পড়ছে। এটায় শ্রেণি, পেশা বা ধনী–গরিবনির্বিশেষে আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বিনা প্রয়োজনে বাইরে না বের হওয়ার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।