
মোহাম্মদ নূরুজ্জামান সরকার বকুল।
ময়মনসিংহ সংবাদদাতা :
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ১নং ভুবনকুড়া ইউনিয়নের পূর্ব লক্ষ্মীকুড়া গ্রামে একজনের হত্যা সংবাদ পাওয়া গেছে। সেই সাথে ক্লুলেস হত্যার ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিশের তৎপরতায় হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট থানায় একটি মামলা হয়েছে, মামলা নম্বর – ১৪, তারিখঃ ১৪/০৫/২০২৫ ইং, ধারাঃ ৩৪১/৩০২/২০১।
জানা যায়,গত ১৪/০৫/২০২৫ ইং তারিখ হালুয়াঘাট থানা পুলিশের কাছে সংবাদ আসে যে, ০১ নং ভুবনকুড়া ইউনিয়নের পূর্ব লক্ষ্মীকুড়া গ্রামে সীমান্ত হতে অনুমান ৫০০ মিটার দূরে জনৈক নূর ইসলাম এর পুকুর পাড়ে ঝোপের ভিতর একজন ৭০/৮০ বছর বয়স্ক ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং তদন্ত শুরু করে। লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ও ঘাতককে সনাক্ত করতে তদন্ত অব্যাহত রাখে। ভিকটিম আব্দুল মতিন (৭২) নিঃসঙ্গভাবে তার নতুন ক্রয়কৃত বাড়িতে একাই বসবাস করতেন। নিজে নিজে রান্না করে খাওয়া দাওয়া করতেন। জমিজমা নিয়ে কারো সাথে কোন পূর্ব বিরোধও ছিল না। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ভিকটিম মতিনের মেয়ে মরিয়ম ও মেয়ে জামাই মোহাম্মদ এরশাদ মিয়া দ্বয়ের মধ্যে মনোমালিন্য চলছে। মৃতদেহ যেখানে পড়েছিল সকাল থেকে ওই স্থানে সে দুইবার ঘুরাফেরা করেছে এবং তার মাকেও অটো দিয়ে এনে লাশ দেখিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মোহাম্মদ এরশাদ মিয়াকে ডেকে এনে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। শুরুতে সে সম্পূর্ণ ঘটনা অস্বীকার করে এবং উগ্র মেজাজ প্রদর্শন করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মোহাম্মদ এরশাদ মিয়া এর পরিহিত লুঙ্গিতে রক্তের আংশিক দাগ পরিলক্ষিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ আরো নিবিড়ভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তখন ঘাতক এরশাদ মিয়া জানান যে, গত ২০০১ সালে তিনি তার মামাতো বোন মরিয়ম বেগমকে প্রেম করে বিয়ে করেন। তারা নারায়ণগঞ্জ থাকতেন। ঘাতক এরশাদ সিএনজি চলাতো ও মরিয়ম বাসা বাড়িতে কাজ করতো। তাদের দুটি সন্তান আছে। পারিবারিক কলহের জের ধরে মরিয়ম তার বাবার বাড়ি চলে আসে। মরিয়মের বাবা মরিয়মকে পরবর্তীতে বিদেশ পাঠিয়ে দেন।
ঘাতক এরশাদ পুনরায় বিয়ে করেন নারায়ণগঞ্জে। ২য় স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তাকে ফেলে ঘাতক এরশাদ হালুয়াঘাট চলে আসেন। বাড়িতে এসে একটি পুরাতন অটোরিকশা ক্রয় করে ঘাতক এরশাদ ও তার ছেলে মিলে চালাতো।
সম্প্রতি ১০/১২ দিন পূর্বে মরিয়ম বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং তার কন্যার বাসা নারায়ণগঞ্জে উঠেন। এটা জানতে পেরে ঘাতক এরশাদ তার ছেলেকে পাঠায় মরিয়মকে আনতে যেন মরিয়ম এরশাদের সাথে সংসার করে। মরিয়ম রাজি হয়নি। ঘাতক এরশাদ তার মাকে পাঠান ডিসিস্ট মতিন কে অনুরোধ করতে যেন মরিয়ম পুনরায় ঘাতক এরশাদ এর সাথে সংসার করে। ভিকটিম মতিন রাজি হননি। ঘাতক এরশাদ নিজেও তার মামার/শশুরের পায়ে ধরে ক্ষমা চান,ভিকটিম মতিন তখন তাকে লাথি মারে। এ নিয়ে ঘাতক এরশাদ প্রচন্ড ক্ষোভ পুষে রাখেন।
এরপর গত ১৩/০৫/২০২৫ ইং ডিসিস্ট মতিন রাত অনুমান ২২:০০ বা ২২:৩০ ঘটিকার দিকে বাজারের দোকান থেকে চা খেয়ে বাড়ির কাছাকাছি আসলে ঘাতক এরশাদ মতিনের পথরোধ করে একটি ইউক্যালিপটাস গাছের ডালের শক্ত লাঠি দিয়ে মতিনের মাথার পিছন দিকে সজোরে আঘাত করেন। উক্ত আঘাতে ভিকটিম মতিন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঘাতক এরশাদ মতিনকে টেনে ইটের সলিং রোড থেকে অনুমান ১২০ মিটার দূরে জনৈক নূর ইসলাম এর পুকুর পাড়ে রেখে আসে। এরপর পুনরায় রাস্তায় গিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা মতিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নিয়ে এসে জনৈক নূর ইসলাম এর পুকুরে ফেলে দেয়। তখন এরশাদ চেয়ে দেখে ডিসিস্ট মতিন উঠে বসে আছে। এরপর সে মতিনের বুকে লাঠি দিয়ে সজোরে আরো দুইটি আঘাত করে এতে মতিন মারা যায়।
হালুয়াঘাট সার্কেলের সম্মানিত সহকারী পুলিশ সুপার জনাব সাগর সরকার এর নেতৃত্বে হালুয়াঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব রাজন চন্দ্র পাল ও এসআই শুভ্র সাহা কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে ঘাতক এরশাদ দ্রুত গ্রেপ্তার হন, ডিসিস্ট মতিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়, রক্তমাখা লুঙ্গি জব্দ করা হয় এবং ঘাতক এরশাদ কে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে তিনি আদালতে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
এদিকে ঘাতক এরশাদের ফাঁসির জন্য এলাকার আপামর জনসাধারণ জোর দাবি জানান।ক্লুলেস হত্যাকান্ডের ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রকৃত দোষী কে গ্রেফতার করার জন্য ধন্যবাদ জানান।