
সোহানুল হক পারভেজ রাজশাহীঃ বিভাগীয় প্রধান :রাজশাহীর তানোরে চাঁদপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হেনা মো. কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি এবং নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী-১ আসনের সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সহযোগিতায় তিনি ১৫ বছরে প্রতিষ্ঠানটির সাড়ে আট কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ। প্রতিষ্ঠানটির জমিসহ বিভিন্ন খাত থেকে আয়ের অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেননি তিনি। এভাবে দরিদ্র পরিবারের সন্তান কামরুজ্জামান অর্থ আত্মসাৎ এবং অনিয়মের মাধ্যমে শূন্য থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিনেছেন ২০ বিঘা জমি। দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বানিয়েছেন আলিশান বাড়ি।তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট এরাজ উদ্দীন ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, দুর্নীতি দমন কমিশন, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক, তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি একসময় জুনিয়র মাদ্রাসা ছিল। স্থানীয়রা সেখানে ৪০ একর জমি দান করেন। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে জুনিয়র স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়। সর্বশেষ এটি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি পায়। বর্তমানে এটি একটি উচ্চবিদ্যালয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলে পরের বছর কামরুজ্জামান প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। এর তিন বছর পর তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। শেষের প্রায় সাত বছর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন পাঁচন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন।অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ৪০ একর জমি প্রতিবছর সর্বোচ্চ ডাক গ্রহীতাকে এক বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। প্রতিবছর এক বিঘা জমির লিজের গড় টাকার পরিমাণ ৫৭ হাজার টাকা। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত লিজের সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান। এছাড়া শিক্ষক, কেরানি, পিওন, ঝাড়ুদার, মালিসহ ১০ জনকে নিয়োগ দিয়ে আরও দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। দুই খাত থেকে আত্মসাৎ করা সাড়ে আট কোটি টাকা তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেননি।এদিকে কামরুজ্জামানের বাবা মৃত মনির উদ্দিনের মাত্র কয়েক বিঘা জমি ছিল বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। মনির উদ্দিন গ্রামের হাটবাজারে ভেষজ ওষুধ বিক্রি করতেন। কামরুজ্জামানরা সাত ভাই-বোন। তিনি ওয়ারিশ সূত্রে বাবার কাছ থেকে মাত্র দুই বিঘা জমি পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি ২০ বিঘা জমির মালিক। নিজ এলাকায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে বানিয়েছেন বাড়ি।অভিযোগকারী এরাজ উদ্দীন বলেন, শিক্ষাবিস্তারের লক্ষ্যে এলাকাবাসী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে ৪০ একর অর্থাৎ ১২০ বিঘারও বেশি জমি দান করেছিলেন। আমার দাদা খোদা বক্সও ৫ একর জমি লিখে দেন। কিন্তু গত ১৫ বছরে প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান সাবেক এমপি ওমর ফারুক ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ লুট করেছেন। আমরা এলাকাবাসী তার দুর্নীতি ও সম্পদ লুটপাটের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য পাঁচন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিনকে তিনবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কল ধরেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। এছাড়া সাবেক এমপি ওমর ফারুক এবং আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রাব্বানী আত্মগোপনে থাকায় তাদেরও বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামানকে বুধবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে কল করা হয়। এ সময় তিনি বলেন, আমি ব্যস্ত আছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, সেগুলো সঠিক না। পরে কথা বলব। তবে বৃহস্পতিবার সকালে কয়েকবার কল দেওয়া হলে তিনি আর ধরেননি।তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মাশতুরা আমিনা বলেন, ইউএনও বদলির পরে আমি কয়েকদিন হলো দায়িত্ব পেয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মহা. জিয়াউল হক বলেন, লিখিত অভিযোগ এখনো আমার নজরে আসেনি। তবে বিধি মোতাবেক আবেদন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।